পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বড় সুখবর। কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন চাকরি থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রে এবার এই সার্টিফিকেট থাকলে ১০% সংরক্ষণ দেওয়া হবে। এবার থেকে EWS (Economically Weaker Section) সার্টিফিকেট পাওয়ার প্রক্রিয়া অনেক সহজ করে দিলো রাজ্য সরকার। যে সমস্ত জেনারেল প্রার্থীরা এতদিন ধরে কোন সংরক্ষণ পেতেন না তারাও এবার অতিরিক্ত ১০% সংরক্ষণ পাবেন। আগে এই শংসাপত্র বানাতে হলে নানা দপ্তরে ঘুরতে হতো, জমা দিতে হতো অসংখ্য কাগজপত্র, আর অপেক্ষা করতে হতো দীর্ঘ সময়। কিন্তু এখন ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে বাড়িতে বসেই অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে EWS ক্যান্ডিডেটের সংখ্যা খুবই কম। তাই দেখা যায় সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রে ই ডব্লিউ এস ক্যান্ডিডেটদের শূন্য পদ সবসময় ফাঁকা থাকে। তাই আপনার হাতে সুবর্ণ সুযোগ এসেছে এখনই বানিয়ে নিন।

এটি বিশেষভাবে উপকারে আসবে সেই সমস্ত সাধারণ (General Category) প্রার্থীদের, যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো রকম সংরক্ষণ সুবিধা পাননি। এখন থেকে তারা সরকারি চাকরিতে ১০% রিজার্ভেশন এবং উচ্চশিক্ষায় বিশেষ কোটা সহজেই পাবেন শুধুমাত্র এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে।

EWS সার্টিফিকেট কী?

EWS বা Economically Weaker Section বলতে বোঝানো হয় সেই সব নাগরিককে যারা General Category-এর আওতায় পড়েন কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। অর্থাৎ, যাদের বার্ষিক পারিবারিক আয় ৮ লক্ষ টাকার কম এবং যাদের সম্পত্তি সীমিত, তারা এই ক্যাটাগরির আওতায় পড়েন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জেনারেল প্রার্থীরা এই ক্যাটাগরির আওতায় আসতে পারেন। পারিবারিক ইনকাম কম থাকলে আপনি এখানে আবেদন জানাতে পারবেন এবং সরকারের তরফ থেকে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন। যে সমস্ত প্রার্থীরা এতদিন সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং SC, ST বা OBC-র মতো অন্য কোনো সংরক্ষণ সুবিধা যদি কেউ না পান, তবে তারা এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সুবিধা নিতে পারবেন। এর ফলে সাধারণ শ্রেণির আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সুযোগ পাবেন।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই সার্টিফিকেট?

আজকের দিনে প্রতিটি চাকরির পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা কয়েক লক্ষ প্রার্থীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং কয়েক কোটি প্রার্থীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই অবস্থায় যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে, তাদের জন্য EWS সার্টিফিকেট একটি বিরাট সহায়ক। সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা এবং সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও আপনি অতিরিক্ত ১০% সংরক্ষণ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও এটি বানানো থাকলে আপনি সরকারের বিভিন্ন ধরনের স্কিম এবং বিভিন্ন স্কলারশিপ বা সরকারের সাহায্য পেতে পারেন।

কারা EWS সার্টিফিকেটের জন্য যোগ্য?

EWS সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।

শর্তবিস্তারিত
জাতিগত ক্যাটাগরিশুধুমাত্র General Category-এর মানুষ আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে এসসি এসটি বা ওবিসি ক্যাটাগরির প্রার্থীরা এখানে আবেদন জানাতে পারবেন না।
বার্ষিক পারিবারিক আয়সর্বোচ্চ ৮ লক্ষ টাকা বা তার কম হতে হবে। অর্থাৎ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা আবেদন জানাতে পারবেন
সম্পত্তির পরিমাণশহরে ১০০০ স্কোয়ার ফিটের কম ফ্ল্যাট অথবা গ্রামে ৫ একরের কম কৃষিজমি থাকতে হবে তাহলেই আবেদন জানানো যাবে
পরিবারে চাকরির অবস্থাযদি পরিবারের কেউ সরকারি উচ্চপদে চাকরি করে থাকেন, তবে আবেদন করা যাবে না। কোন পরিবারের যদি কেউ সরকারি চাকরি না করে থাকেন তাহলে এই সুবিধা পাবেন।
বয়সন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।

কীভাবে আবেদন করবেন?

🔹 অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানাতে হবে

এখানে আবেদন জানানোর জন্য প্রথমে এই প্রার্থীদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানাতে হবে।

১. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২. “Apply for EWS Certificate” অপশন নির্বাচন করুন।
৩. নাম, ঠিকানা, আয়ের তথ্য, সম্পত্তির বিবরণ ইত্যাদি দিয়ে ফর্ম পূরণ করুন।
৪. প্রয়োজনীয় নথি স্ক্যান করে আপলোড করুন।
৫. আবেদন সাবমিট করুন এবং রসিদ সংগ্রহ করুন।

সমস্ত কিছু সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয়ে গেলে প্রার্থীরা প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্টস নিয়ে ভিডিও অফিসে অথবা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে জমা দিতে পারেন। এরপর আপনার বাড়িতে ইনকোয়ারি করা হবে এবং আপনি যদি সত্যিই উপযুক্ত হন তাহলে খুব শীঘ্রই এই কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন।

প্রয়োজনীয় নথিপত্র

এখানে যারা আবেদন জানাতে ইচ্ছুক তাদের বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকতে হবে এই ডকুমেন্টসগুলো না থাকলে আবেদন জানাতে পারবেন না। এছাড়াও এখানে আবেদন জানাতে হলে আপনাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে। সমগ্র ভারতবর্ষে কেন্দ্র সরকার এই কার্ড চালু করেছেন তাই আপনি ভারতের যে কোন জায়গার স্থায়ী বাসিন্দা হলেই সেই জায়গা থেকে আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে যে সমস্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রয়োজন সেগুলি হল-

  • আধার কার্ড / ভোটার আইডি (পরিচয় প্রমাণ)
  • রেশন কার্ড / বিদ্যুৎ বিল / জলবিল (ঠিকানা প্রমাণ)
  • আয় শংসাপত্র (পঞ্চায়েত বা BDO অফিস থেকে জারি)
  • জমির দলিল বা সম্পত্তির প্রমাণপত্র
  • সাম্প্রতিক রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • অনলাইন/অফলাইন আবেদন রশিদ

সতর্কবার্তা – ভুল তথ্য দেবেন না

সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে কেউ যদি ভুয়ো তথ্য বা জাল নথি জমা দেন, তবে তাঁর আবেদন বাতিল হবে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই আবেদন করার সময় অবশ্যই সঠিক নথি জমা দিন। আপনি যদি কোন ভুল তথ্য দিয়ে এই সংরক্ষণের সুবিধা পেতে চান এবং সেটি যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ নিয়ে আপনার জরিমানা ও হতে পারে এমনকি আপনার জেল পর্যন্ত হতে পারে।

EWS সার্টিফিকেটের ফলে পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার সাধারণ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থী নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। যাঁরা এতদিন কোনো সংরক্ষণ সুবিধা পাননি, তাঁদের জন্য এটি জীবন পরিবর্তনের মতো সুযোগ। এতদিন ধরে জেনারেল প্রার্থীরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমস্ত ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকতেন এবার তাদের জন্য চলে এলো বিশেষ এই সুবিধা এবং এর ফলে সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রে এই প্রার্থীরাও সমমানের সংরক্ষণ পাবেন।

আজকের দিনে প্রতিটি চাকরি বা শিক্ষার আসনের জন্য যে প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে, সেখানে সাধারণ শ্রেণির আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষরা পিছিয়ে পড়ছিলেন। সেই বাধা দূর করতেই এসেছে EWS সার্টিফিকেট। যে সমস্ত প্রার্থীরা আর্থিকভাবে দুর্বল এবং সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে অন্যান্য যেকোনো সরকারী সুযোগ-সুবিধা পেতে চান তারা খুব সহজেই সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন। এখন বাড়িতে বসেই সহজে আবেদন করা সম্ভব, আর এর মাধ্যমে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক বড় সুবিধা নেওয়া যাবে। তাই যদি আপনি এই যোগ্যতার মধ্যে পড়েন, তাহলে দেরি না করে আজই EWS সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করুন। এই সার্টিফিকেট বানালে আপনার জীবন পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এই সার্টিফিকেট বানানোর পরে আপনি খুব সহজেই চাকরি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যেতে পারেন।