বর্তমান হচ্ছে ডিজিটাল যুগ তাই সমস্ত কিছু ডিজিটাল করা হচ্ছে। তাই রাজ্য সরকার যেমন সমস্ত ডকুমেন্টস ডিজিটাল করছে ঠিক তেমনি কেন্দ্র সরকার ও সমস্ত হাতে লেখা এবং পুরনো ডকুমেন্টগুলো ডিজিটাল করছে। বর্তমান সময়ে সরকার নাগরিক পরিষেবাকে দ্রুত ও স্বচ্ছ করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এবার সেই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছে, পুরনো হাতে লেখা বা ম্যানুয়াল কাস্ট সার্টিফিকেট আর কার্যকরী থাকবে না। এর ফলে যাদের পুরনো হাতে লেখা কাস্ট সার্টিফিকেট রয়েছে তাদের এবার নতুন করে অনলাইনের মাধ্যমে কাস্ট সার্টিফিকেট বানিয়ে নিতে হবে অর্থাৎ, এখন থেকে যেকোনো সরকারি প্রকল্প, শিক্ষা বৃত্তি, চাকরির আবেদন বা সংরক্ষিত আসনের সুবিধা নিতে হলে নাগরিকদের ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। ফলে যারা এখনও পুরনো SC, ST বা OBC সার্টিফিকেট ব্যবহার করছেন, তাঁদের দ্রুত সেটি ডিজিটাল করতে হবে। তাহলে কিভাবে আপনারা এই ডিজিটাল সার্টিফিকেট বানাবেন সে ব্যাপারে চলুন জানা যাক।

কেন ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেট জরুরি?

ডিজিটাল সার্টিফিকেট বর্তমান অনলাইনে আপলোড থাকে তাই যেকোনো সময় যে কেউ এর বৈধতা যাচাই করে নিতে পারে। আগে স্থানীয় পঞ্চায়েত বা এসডিও অফিস থেকে হাতে লেখা কাস্ট সার্টিফিকেট পাওয়া যেত। এই সার্টিফিকেট অনেক সময় হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়ার কারণে বড় সমস্যায় পড়তে হতো। হারিয়ে গেলে নতুন করে সার্টিফিকেট বের করা খুব কঠিন হয়ে যেত। নতুন ব্যবস্থায় প্রতিটি সার্টিফিকেট ইউনিক নম্বরসহ অনলাইনে তৈরি হবে, ফলে তা সহজেই যাচাই করা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনে ঘরে বসেই ডাউনলোড করা যাবে। এর ফলে সরকারি প্রকল্পে জাল সার্টিফিকেটের ব্যবহার রোধ হবে এবং আবেদনকারীর পরিচয় আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে। বিশেষ করে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে এই সার্টিফিকেট এখন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবেদন করতে কোন কোন নথি লাগবে?

যাদের পুরনো কাস্ট সার্টিফিকেট রয়েছে তাদের ডিজিটাল কার্ড সার্টিফিকেট বানাতে তেমন কোন ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে না। ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেট তৈরির জন্য অল্প কিছু নথি আগে থেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পুরনো হাতে লেখা কাস্ট সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি, আধার কার্ড, একটি বৈধ মোবাইল নম্বর, এবং সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। সব নথি নির্দিষ্ট ফরম্যাট ও সাইজে আপলোড করতে হবে, নইলে আবেদন গৃহীত হবে না। অনলাইনে আবেদন করে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেট আপনি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

কোথায় এবং কীভাবে আবেদন করবেন?

ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (castcertificatewb.gov.in)। সেখানে প্রবেশ করার পর “Backlog Certificate” অপশন থেকে নিজের ক্যাটাগরি (SC/ST/OBC) বেছে নিতে হবে। এরপর আবেদন ফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য, পুরনো সার্টিফিকেটের নম্বর, ইস্যুর তারিখ, সাব-কাস্ট, ঠিকানা ও যোগাযোগের বিবরণ সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

এরপর ছবি ও সার্টিফিকেট আপলোড করে ফর্ম সাবমিট করলে একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর পাওয়া যাবে। এই নম্বরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে আবেদন স্ট্যাটাস জানা যাবে এবং সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যাবে।

আবেদন স্ট্যাটাস ও ডাউনলোড পদ্ধতি

আবেদন করার পরে আপনি আপনার স্ট্যাটাস চেক করে দেখতে পারবেন এবং স্ট্যাটাস যদি অ্যাপ্রুভ হয়ে যায় তাহলে আপনি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। ফর্ম জমা দেওয়ার কয়েকদিন পর আবেদনকারীরা অনলাইনে গিয়ে তাদের সার্টিফিকেটের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। যদি আবেদন অনুমোদিত হয়, তবে “Download Certificate” অপশন থেকে PDF ফরম্যাটে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে সরাসরি ব্যবহার করা যাবে। এই সার্টিফিকেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরির আবেদন বা অন্যান্য সরকারি প্রকল্পে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হবে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জন্য এক বিশাল সুবিধা বয়ে আনছে। সাধারণ মানুষদের পাশে রাজ্য সরকার সর্বদা রয়েছে এবং সর্বদা থাকবেন। হাতে লেখা পুরনো কাস্ট সার্টিফিকেটকে ডিজিটাল আকারে রূপান্তরিত করার ফলে নাগরিকরা শুধু সরকারি সুবিধা নিতেই পারবেন না, বরং তাঁদের পরিচয়পত্র আরও নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। তাই যারা এখনও তাঁদের সার্টিফিকেট ডিজিটাল করেননি, তাঁদের এখনই অনলাইনে আবেদন করে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা উচিত। ভবিষ্যতের জন্য এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কারণ সরকারি ও বেসরকারি—সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাল কাস্ট সার্টিফিকেটই গ্রহণযোগ্য হবে।